Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

খাল বিল নদী



১২ টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত ৩৪১৩.৬৮ বর্গ কি: মি: আয়তন বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার সম্ভার। টাঙ্গাইল জেলার নদ-নদীসমূহ য়েন এ নৈসর্গিক সৌন্দর্যে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে। তাছাড়াও এই নদ-নদীসমূহ স্থানীয় জনসাধারণের জীবিকা অর্জনেও গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে টাঙ্গাইল জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য নদীসমূহের বর্ণনা তুলে ধরা হল;


ধলেশ্বরী নদী

ধলেশ্বরী নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলা, মানিকগঞ্জ জেলা, ঢাকা জেলা নারায়ণগঞ্জ জেলা এবং মুন্সীগঞ্জ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৯২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৪৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটি মূলত বাংলাদেশের মধ্যভাগে দিয়ে প্রবাহিত একটি জলধারা। এটি যমুনা নদীর একটি শাখা। টাঙ্গাইল জেলার উত্তর পশ্চিম প্রান্তে যমুনা নদী হতে ধলেশ্বরীর সূচনা। নদীটি নারায়ণগঞ্জ জেলার কাছে শীতলক্ষা নদীর সাথে মিলিত হয়ে পরবর্তীকালে মেঘনা নদীতে পতিত হয়।

বংশী নদী:

বংশী নদী বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে প্রবাহিত একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের জামালপুর, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৩৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৯ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বংশী নদী পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শাখানদী| ইহা বাসাইল উপজেলার পূর্ব সীমান্ত নির্ধারণী নদী। ‘‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হতে উৎপন্ন হয়ে জামালপুরের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাংগাইল জেলার মধুপুরে গিয়ে পৌঁছে বানার নদীর একটি ও ঝিনাই নদীর একটি শাখার সাথে মিলিত হয়ে দক্ষিণে টাংগাইলের মির্জাপুর হয়ে, ঢাকার কালিয়াকৈরে দুইভাগ হয়ে মূল ধারা তুরাগ নামে দক্ষিণ-পূর্বদিকে গিয়ে ঢাকার মিরপুর হয়ে বুড়ীগঙ্গায় পড়েছে। দ্বিতীয় ক্ষুদ্র ধারাটি কালিয়াকৈর হতে দক্ষিণমুখী সাভার হয়ে ধলেশ্বরীতে পড়েছে ( টাংগাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃঃ ৯৫)’’। ‘‘এ জেলার মাঝারিধরনের নদীসমূহের মধ্যে বংশাই সবচাইতে দীর্ঘ। উৎপত্তিস্থল হতে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত এটি দৈর্ঘ্যে ১০০ মাইল ( কোম্পানী আমলে ঢাকা, জেমস টেলর, পৃঃ ৭)’’।


যমুনা নদী: 

যমুনা বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর একটি। এটি ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রধান শাখা। ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের মধ্যে সংঘটিত ভূমিকম্প ও ভয়াবহ বন্যার ফলে ব্রহ্মপুত্রের তৎকালীন গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে বর্তমান কালের যমুনা নদীর সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ ভূখন্ডে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার দৈর্ঘ্য ২৭৬ কিমি যার মধ্যে যমুনা নদীর দৈর্ঘ্য ২০৫ কিমি। নদীটির প্রশস্ততা ৩ কিমি থেকে ২০ কিমি পর্যন্ত, তবে এর গড় প্রশস্ততা প্রায় ১০ কিমি। যমুনা নদী পদ্মা নদীতে পতিত হয় গোয়ালন্দে। যমুনার প্রবাহমান জেলাসমূহ-বগুড়া জেলা, সিরাজগঞ্জ জেলা, টাঙ্গাইল জেলা (টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতি এবং ভূঞাপুর উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত) গাইবান্ধা জেলা। যমুনার প্রধান উপনদী গুলো হল তিস্তা, ধরলা, করতোয়া, আত্রাই, সুবর্ণশ্রী (করতোয়া যমুনার দীর্ঘতম এবং বৃহত্তম উপনদী) বাঙালি+যমুনা বগুড়া।


পুংলী নদী:

পুংলী নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৯ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৩০ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


ঝিনাই নদী

ঝিনাই নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের শেরপুর, জামালপুর এবং টাঙ্গাইল এবং জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৩৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।বাসাইল উপজেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত। ঝিনাই জামালপুরের বাউশী থেকে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে একটি শাখা ডানদিকে বেঁকে যমুনার পূর্ব পাশ দিয়ে ভূয়াপুর থানার ৭ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে যোকার চরের কাছে ধলেশ্বরীর উৎসমুখের কাছে মিলিত হয়েছে। অপর শাখা দক্ষিণ-পূর্বমূখী হয়ে বাসাইল ফুলকী হয়ে বংশী নদীতে পতিত হয়েছে। অন্য অংশ দক্ষিণমুখী হয়ে বাসাইলের ফুলকী-আইসড়া, দেউলী, দাপনাজোর নথখোলা হয়ে দক্ষিণমুখী হয়েছে (টাংগাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃঃ ৯৫)। ঝিনাই বাসাইল উপজেলার মধ্য-প্রবাহিনী নদী হওয়ায় এর সবটুকু সুযোগ-সুবিধা এলাকাবাসীগণ ভোগ করেন।


লৌহজং নদী

লৌহজং নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৮ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। এই নদী অববাহিকার আয়তন ১০৪ বর্গ কিমি। নদীটি টাঙাইল শহরের দিঘুলিয়া, কলেজেপাড়া, কাগমারা, বেরাডোমা, আকুরটাকুর পাড়া, কাগমারি, কাজিপুর দিয়ে প্রবাহিত। টাঙ্গাইল শহরের প্রান এই নদী।লৌহজং যমুনার শাখা নদী। ভূয়াপুর থানা সদরের গাবসাড়া হতে উৎপন্ন হয়ে ভূয়াপুর থানা সদরের এক কিঃমিঃ উত্তরে পাঁচটিকরীতে ঝিনাইর সাথে মিশে দক্ষিণ-পূর্বাভিমুখী হয়েছে। এসময় নদীটি টাংগাইল-করটিয়া, বাসাইল সীমান্ত দিয়ে মির্জাপুর-জামুর্কী হয়ে বংশী নদীর সাথে মিলিত হয়। বাসাইল উপজেলায় এটি নাহালী ও মটরা গ্রাম দিয়ে বাসাইল অতিক্রম করে। নদীটি বর্তমানে প্রায় মৃত। যদিও একসময় নদীটি ছিল প্রবল খরস্রোতা। কেদারনাথ মজুমদার লৌহজং নদী সম্পর্কে নিম্নরূপ বিবরণ দিয়েছেনঃ ‘‘টাংগাইল মহকুমার অন্তর্গত বৈষ্ণববাড়ী হইতে যমুনার একটি শাখা বাহির হইয়াছে। ইহার নাম লৌহজঙ্গ। লৌহজঙ্গ নদী টাংগাইল, করটিয়া ও জামুর্কী প্রভৃতিস্থানের নিকট দিয়া প্রবাহিত হইয়া ঢাকা জেলার বংশাই নদীর সাথে মিলিত হইয়াছে।


বৈরান নদী

বৈরান নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৬ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


নাংলী নদী

নাংলী নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


এলংজানি

এলংজানি যমুনার একটি শাখানদী। নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৭ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। যমুনার পশ্চিম দিকের প্রবাহটি এলংজানি নামে পরিচিত। টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার ধলেশ্বরী থেকে উৎপন্ন হয়ে দেলদুয়ারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার নাংলী নদীতে পড়েছে।


হাই / হাওয়া নদী

হাই নদী বা হাওয়া নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


টংকি নদী

টংকি নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৪৩ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


নাঙ্গলা নদী

নাঙ্গলা নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫১ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


পুরনো ধলেশ্বরী নদী

পুরনো ধলেশ্বরী নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সিরাজগঞ্জ জেলা, টাঙ্গাইল জেলা এবং ময়মনসিংহ জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। \


চাপাই নদী

চাপাই নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩২ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


গোয়াইল্যা নদী

গোয়াইল্যা নদী বা বেলতলি নদী বা গোল্লার খাল বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল ও গাজীপুর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩৪ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


বোশখালীর নদী

বোশখালীর নদী বাংলাদেশের উত্তর-কেন্দ্রীয় অঞ্চলের টাঙ্গাইল ও ঢাকা জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২৬ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার।


 বাসুলিয়া চাপড়া বিল

বাসাইলের বুকে সতত বিচরণশীল বিপুল জনগোষ্ঠির দৈনন্দিনতার জন্য প্রয়োজনীয় জল প্রকৃতিগতভাবে যোগান দিচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়। বছরের একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে চলাচলের জন্য প্রয়োজন জলপথের। সকল কিছুর উর্ধে কৃষিজ উৎপাদনের জন্য জলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাসাইলে মোট জলাশয়ের পরিমাণ-৪৩০ হেক্টর। এখানকার প্রধান নদী বংশী বা বংশাই, লৌহজং ও ঝিনাই। খালের মধ্যে রয়েছে কুচিয়ামারার খাল, নয়ার খাল, মইষাখালীর খাল, ময়থার খাল, বেংড়া খাল, খসরুখালির খাল প্রভৃতি। তবে এসব খাল প্রায় ক্ষেত্রেই নদীর শাখা রূপে সৃষ্টি হয়ে আবার নদীতেই মিশেছে। বিলের মধ্যে বালিয়া বিল, কাউলজানী বিল, ডুবাইল বিল আকারে কিছুটা বড়। এছাড়া আরো ছোট ও মাঝারি আকারের বিল রয়েছে। যেমন- চাপড়া বিল, দেও বিল,পদ্ম বিল, চাটাই বিল, বারকাটি বিল, বার্থা বিল ইত্যাদি।


প্রাকৃতিক ও নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাসাইল উপজেলার অন্যতম একটি সুন্দর স্থান বাসুলিয়া (Basulia) (চাপড়া বিল Chapra Bill)। টাঙ্গাইল শহর থেকে বাসুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল থেকে বাসাইল, তারপর সখীপুর সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার পেরোলেই বাসুলিয়া। সখীপুর যাওয়ার সময় হাতের ডান দিকে পড়ে এক বিশাল বিল। নাম চাপড়া বিল। এর পূর্ব-দক্ষিণাংশে পানিতে দাঁড়িয়ে আছে হিজল গাছ। যেন পানিতে ভাসছে। সড়কে দাঁড়ালে দক্ষিণের জলরাশি ছুঁয়ে আসা মিষ্টি হাওয়া গা জুড়িয়ে দেয়।প্রতিদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এলাকাটি। মনোরম পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে দর্শনার্থীরা ছুটে আসে পরিবার-পরিজন নিয়ে। নৌকায় উঠতে লাইন দিতে হয় দর্শনার্থীদের। ঈদ ও অন্যান্য পার্বণে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জমে।


সর্বশেষ আপডেটঃ ৩১/০৮/২০২৩