Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

পুরাকীর্তি সম্পর্কিত

টাঙ্গাইল জেলা এমন একটি স্থান যেখানে একটি সমৃদ্ধ পুরাকীর্তি ঐতিহ্য রয়েছে, কারণ এখানে অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান রয়েছে যা বিভিন্ন সময়কালের। টাঙ্গাইল জেলার কিছু উল্লেখযোগ্য পুরাকীর্তি স্থান হলঃ


১) ধনবাড়ির ঐতিহ্যবাহী জমিদারি পুরাকীর্তি নবাব মঞ্জিল:

মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ধনপতি সিংহকে পরাজিত করে মোগল সেনাপতি ইস্পিঞ্জর খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ধনবাড়ীতে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। নবাবের উত্তরাধিকারীরা জমিদারবাড়িতে গড়ে তোলেন পিকনিক স্পট, যা নবাব সৈয়দ হাসান আলী রয়্যাল রিসোর্ট হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছে। অসাধারণ এক জমিদারি পুরাকীর্তি হল নবাব মঞ্জিল, যা স্থানীয়ভাবে নবাববাড়ি নামেই অধিক পরিচিত। এটি তৈরি নবাব আলী চৌধুরীর হাতে এবং বর্তমানে নবাব আলী চৌধুরীর উত্তরসূরিরা এই রাজবাড়ির দেখভাল করছেন । প্রাসাদটি এখন একটি অবলম্বন যা আবাসন, খাবার এবং বিনোদনের সুবিধা প্রদান করে। আপনি আশেপাশের বাগান, হ্রদ এবং ঝর্ণা এর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন।

২) আতিয়া মসজিদ:



টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় শিলালিপি অনুযায়ী সৈয়দ খান পন্নী ১৬০৯ এই মসজিদ নির্মাণ করেন । ৬৯' x৪০' পরিমাপের এই মসজিদটির প্রধান কক্ষের উপরে একটি গম্বুজ এবং বারান্দার উপর ছোট তিনটি গম্বুজ রয়েছে। পূর্ব দেয়ালে রয়েছে তিনটি প্রবেশপথ। বর্গাকৃতির মসজিদটি প্রাক মুঘল এবং মুঘল যুগের স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটেছে। বাংলাদেশের দশ টাকার নোটে যে আতিয়া মসজিদের ছবিটি মুদ্রিত আছে। নির্মাতা- সাঈদ খান পন্নী। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলির মধ্যে একটি, এটি ১৬ শতকের আগে। মসজিদটিতে পোড়ামাটির অলঙ্করণ, ফুলের নকশা এবং ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপি সহ একটি অত্যাশ্চর্য স্থাপত্য রয়েছে। মসজিদটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট।

৩) করটিয়া জমিদার বাড়িঃ

প্রাকৃতিক এবং নিরিবিলি পরিবেশের এই জমিদার বাড়ীটি প্রায় ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ০.৫ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্রাচীরঘেরা যেখানে রয়েছে লোহার ঘর, রোকেয়া মহল, রাণীর পুকুরঘাট, ছোট তরফ দাউদ মহল এবং বাড়িসংলগ্ন মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া মসজিদ একটি ঐতিহাসিক স্থাপত্য। মোগল ও চৈনিক স্থাপত্যের মিশেলে নির্মিত জমিদার বাড়ীটি প্রথম দর্শনেই আপনার মন কেড়ে নেবে। সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে অবস্থিত মোগল স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন রোকেয়া মহল; যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে। টাঙ্গাইল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পুটিয়ার তীর ঘেঁষে আতিয়ারচাঁদ খ্যাত জমিদার ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর করটিয়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত ।


৪) আদম কাশ্মীর মাজার:

সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে নাগরপুর উপজেলায় অবস্থিত হযরত শাহান শাহ বাবা আদম কাশ্মিরির (রহ.) স্মৃতিবিজড়িত এক পুণ্যস্থান। শাহান শাহ বাবা আদম কশ্মেরী (রহ.) কাশ্মীর থেকে এখানে ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। যে স্থানটিতে মাজারটি স্থাপন করা হয়েছে সে স্থানে তিনি মূলত বসে বিশ্রাম নিতেন এবং কথাবার্তা বলতেন। বর্তমানে এই জায়গাটিকেই সংরক্ষণ করে একটি স্থাপনা নির্মান করা হয়েছে।


৫) গোপালপুরের হেমনগর জমিদারবাড়ী:

বাংলাদেশের জমিদার বাড়িগুলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। দেশের ইতিহাস বিনির্মাণে এই জমিদারবাড়িগুলো আজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রত্নতাত্ত্বিক এই নিদর্শনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ১২৪ বছর আগে পুখুরিয়া পরগণার প্রভাবশালী জমিদার হেমচন্দ্র চৌধুরী অনিন্দ সৌন্দর্যমন্ডিত এই বাড়িটি তৈরি করেন। তিনি ছিলেন মধুপুর উপজেলার আমবাড়ীয়ার জমিদারের উত্তরসূরি। হেমচন্দ্রের দাদা পদ্মলোচন রায় ব্রিটিশ সূ্যাস্ত আইনের মাধ্যমে আমবাড়ীয়ার জমিদার দখল করেন। ১৮৮০ সালে হেমচন্দ্র তার আমবাড়ীয়ার জমিদার স্থানান্তরিত করে সুবর্ণখালিতে নির্মাণ করেন এক রাজবাড়ী। জমিদারি পরিচালনার ক্ষেত্রে দূরত্ব এবং দশ বছরের মাথায় এ রাজবাড়ী যমুনা গর্ভে নিমজ্জিত হওয়ায়, তিনি তার জমিদারি সুবর্ণখালি থেকে তিন কিলো পূর্ব-দক্ষিণে শিমলাপাড়া মৌজায় ১৮৯০ সালে একটি নতুন দ্বিতল রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে জমিদার বাড়ি হিসেবে খ্যাত। ১৯৭১ সালে হেমনগর পরী দালান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি। এখান থেকেই কাদেরিয়া বাহিনীর যোদ্ধারা পাকিস্তানী হানাদার ও বর্বর বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।


৬) মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমস:


ভারতেশ্বরী হোমস টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের নামকরা একটি নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নারীর ভাগ্যোন্নয়নের লক্ষে প্রতিষ্ঠানটি ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন টাঙ্গাইলের জমিদার দানবীর হিসেবে খ্যাত রণদা প্রসাদ সাহা। তিনি প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন তার পিতামহী ভারতেশ্বরী দেবীর নামানুসারে। শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার জন্য ভারতেশ্বরী হোমসের নাম দেশজুড়ে সুবিদিত। এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ছাত্রীদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা। এতে ছাত্রীদের উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে।


৭) মহেড়া জমিদার বাড়ী:

মহেরা জমিদার বাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরে অবস্থিত কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে একটি। ঢাকা - টাংগাইল মহাসড়কে নাটিয়াপাড়া বাজার হতে আনুমানিক ৪ কিলোমিটার পূর্বে মহেড়া জমিদার বাড়ি অবস্থিত। এই জমিদার বাড়ির সামনে প্রবেশ পথের আগেই রয়েছে ‘বিশাখা সাগর’ নামে বিশাল এক দীঘি এবং বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে ২টি সুরম্য গেট। এছাড়াও মূল ভবনে পিছনের দিকে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর নামে আরো দুইটি পুকুর রয়েছে এবং শোভাবর্ধনে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। বিশাখা সাগর সংলগ্ন দক্ষিণ পার্শ্বে রয়েছে বিশাল আম্র কানন ও বিশাল তিনটি প্রধান ভবনের সাথে রয়েছে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘিসহ ও আরো তিনটি লজ। সেখানে একটি ফোয়ারা আছে সেটা ১৮৯০ সালে র্নিমান করা হয়েছে। প্রাসাদটি এখন একটি জাদুঘর যা জমিদারি যুগের বিভিন্ন শিল্পকর্ম, চিত্রকর্ম এবং আসবাবপত্র প্রদর্শন করে। আপনি মোহেরা জমিদার বাড়ি মসজিদটিও দেখতে পারেন, যা মুঘল স্থাপত্যের একটি সুন্দর নিদর্শন।


৮) নাগরপুরের চৌধুরী বাড়ী ও উপেন্দ্র সরোবর:


উপেন্দ্র সরোবর টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে অবস্থিত একটি পর্যটন এলাকা। এটি স্থানীয়ভাবে ‘১২ ঘাটলা দীঘি’ নামে পরিচিত। এ উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র এটি। এছাড়া বিভিন্ন জেলার ভ্রমণ পিপাসুরা আসেন এখানে। মৎস্য শিকারীদের জন্য এখানে মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। উপেন্দ্র সরোবরের প্রধান প্রবেশদ্বার পশ্চিম পাড়ে রয়েছে।টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরের কাঠুরি শিব মন্দিরের পাশে দৃষ্টিনন্দন উপেন্দ্র সরোবরটি অবস্থিত। জমিদার রায় বাহাদুর মোট ১১ একর জায়গায় সুদৃশ্য এই দিঘি খনন করেন (১৩৬৮)। দিঘির চারদিকে সুপ্রসস্ত ১২টি ঘাটলা এবং স্বচ্ছ পানি নিশ্চিত করার জন্যে ৬টি সুগভীর ইন্দারা (কুয়া) খনন করেন। এছাড়া নৈসর্গিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যে এর চারপাশে লাগানো হয় সুদৃশ্য খেজুর গাছ।

৯) পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী:


এটি ১৮ শতকে পাকুটিয়ার জমিদারদের দ্বারা নির্মিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদ। পরী ভাস্কর্য, শোভাময় স্তম্ভ এবং গম্বুজ সহ প্রাসাদটির একটি অনন্য নকশা রয়েছে। আপনি পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি মসজিদও দেখতে পারেন, যা বাংলাদেশের প্রাচীনতম মসজিদগুলির মধ্যে একটি। টাংগাইল সদর থেকে ৩৫কিমি. দক্ষিণে নাগরপুর উপজেলার লৌহজং নদীর তীরে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ী অবস্থিত।


১০) সন্তোষ জমিদারবাড়ি:


প্রায় ১৮০০ শতকে জমিদার মন্মথনাথ রায় এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন করেন। এই জমিদার বংশধররা ছিলেন শিক্ষানুরাগী। তারা তাদের জমিদারী আমলে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এই বাড়িতেই জন্ম নেন তিন মহিলা শিক্ষানুরাগী জাহ্নবী চৌধুরানী, দিনমনি চৌধুরানী এবং বিন্দুবাসিনী চৌধুরানী।


১১) দেলদুয়ার জমিদার বাড়িঃ


 টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত ঐতিহাসিক দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি,যা অনেকের কাছে নর্থ হাউজ নামে পরিচিত। ফতেহাদাদখান গজনবী
চারদিক দিয়ে দেয়ালবেষ্টিত একতলা বিশিষ্ট জমিদার বাড়িটি ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীর আদলে তৈরি করেন। জমিদার বাড়ির সামনের দিকে রয়েছে পারিবারিক কবরস্থান। পূর্ব-দক্ষিণ কোনে রয়েছে একটি মসজিদ। পূর্ব পাশে বসার জন্য রয়েছে লোহার গার্ডেন চেয়ার, গোল টেবিল এবং পাশেই রয়েছে কৃত্রিম পানির পেয়ারা। বাড়ির পিছন দিকে রয়েছে আম বাগান এবং বাগানের মাঝখানে রয়েছে টালির দোতালা শেড। বাংলা মুসলিম গদ্য সাহিত্যের পথিকৃৎঔপন্যাসিক মীর মশাররফ হোসেন তাঁর অমর ঐতিহাসিক উপন্যাস ' বিষাদ সিন্ধু'এই জমিদার বাড়িতে বসেই রচনা করেছিলেন।