১৮৪২খ্রিস্টাব্দে প্রশাসনিকক্ষেত্রে মহকুমা ব্যবস্থা চালু করা হয় সমগ্র উপমহাদেশে। ১৮৬৬ সালে 'আটিয়া" কে থানায় রুপান্তর করে ময়মনসিংহ কালেক্টরেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। টাঙ্গাইলের অধিকাংশ মৌজা তখন এই আটিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬৯ সালে ইংরেজ সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজার অন্তর্গত আটিয়া পরগণায় টানআইল থানা প্রতিষ্ঠা করে , যা পরে টাঙ্গাইল নামে রুপান্তরিত হয়।
বাংলার বিভিন্ন জেলা সমূহে বিদ্যমান অসুবিধা ও জটিল পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য সরকার ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ৬ সদস্য বিশিষ্ট Bengal District Administration committee গঠন করেন। কমিটির মেয়াদকাল ছিল ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দ। মিঃ ই.ভি লিভিঞ্জ ছিলেন কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিব ছিলেন মিঃ সি.ই.লো। কমিটির সম্মানিত সদস্য ছিলেন মিঃ এইচ. ভি. লোভেট, মিঃ এন.ডি বিটসন বেল, মিঃ কে.সি.দে এবং মিঃ ই.এন. ব্লান্ডি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর তারিখে কমিটি কাজ শুরু করেন। উক্ত কমিটি সরকারের বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ, বিগত কমিটি সমূহের রিপোর্ট পর্যালোচনার পাশা পাশি বিভিন্ন জেলায় সরোজমিনে পরিদর্শণ ও সুধিমহলের সঙ্গে মত বিনিময়ের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে নিজস্ব সুপারিশ বা প্রস্তাবনা সরকারের নিকট পেশ করেন। তাদের সুপারিশ মালায় ময়মনসিংহ জেলা বিভিক্ত করে তিনটি পৃথক জেলা প্রতিষ্ঠা(ময়মনসিংহ, গোপালপুর ও কিশোরগঞ্জ) এবং বিদ্যমান পাঁচটি মহকুমার স্থলে নয়টি মহকুমার স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল।
প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলার রূপরেখা ও কাঠামোঃ নালিতাবাড়ি থানা ব্যতীত সমগ্র জামালপুর এবং টাঙ্গাইল মহকুমা নিয়ে প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা গঠিত হবে। জেলা সদরের জন্য স্থান নির্বাচন প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল ও জামালপুর শহরের অধিবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজমান ছিল। উভয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল লক্ষনীয়। জামালপুর ও টাঙ্গাইলের মধ্যে টাঙ্গাইল মহকুমা ছিল বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। টাঙ্গাইল অথবা জামালপুর শহরের যে কোন একটিকে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে বেছে নিলে তা জেলার একপ্রান্তে অবস্থিত থাকবে। সেজন্য প্রশাসনিক যে অসুবিধা দেখা দিবে তা মোকাবেলার জন্য আবারও নতুন মহকুমা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। এসমস্ত অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনা করে কমিটি টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত গোপালপুর থানাতে জেলা সদর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রস্তাবিত জামালপুর-টাঙ্গাইল এবং সুর্বণখালী-ময়মনসিংহের রেলপথের সংযোগস্থলের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকর একটি জায়গাতে জেলা সদর নির্মাণের স্থান বাছাই করা হয়।
প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলায় মহকুমা ছিল তিনটিঃ
ক) সদর মহকুমা,
খ) জামালপুর মহকুমা,
গ) টাঙ্গাইল মহকুমা।
ক) সদর মহকুমাঃ সরিষাবাড়ি, গোপালপুর, কালিহাতী ও ঘাটাইল থানা নিয়ে গঠিত।
খ) জামালপুর মহকুমাঃ জামালপুর-মেলান্দ, শেরপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ থানা সমন্বয়ে গঠিত।
গ) টাঙ্গাইল মহকুমাঃ টাঙ্গাইল, বাসাইল, মির্জাপুর ও নাগরপুর থানা সমন্বয়ে গঠিত।
প্রস্তাবিত জেলার প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সরকারী কর্মকর্তা (Civil Executive Staff) ছিল নিম্নরূপঃ
১। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটঃ ০১ জন
২। মহকুমা প্রশাসকঃ ০১ জন করে প্রতি মহকুমায়
৩।প্রথম শ্রেণীর ক্ষমতা সম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট ০২ জন (জেলা সদরের জন্য)
৪।ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও সাব ডেপুটি ম্যাজিস্টেট (২য় শ্রেণী/৩য় শ্রেণীর ক্ষমতা সম্পন্ন) জেলা সদরের জন্য
৫। টাঙ্গাইল ও জামালপুর মহকুমার জন্য ২য় শ্রেণী ক্ষমতা সম্পন্ন ২ জন করে সাব ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট।
১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দে Bengal District Administration Committee টাঙ্গাইল ও জামালপুর, সদর মহকুমা সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলার’রূপরেখা ও কাঠামো চুড়ান্ত করার পাশাপাশি জেলা ও মহকুমা সমূহের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতি নজর রেখেছিলেন। কারণ জলাভূমি, নদ-নদী, উপনদী, খালবিল নালার কারণে তৎকালীন স্থল যোগাযোগ ব্যবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। এলাকার উন্নয়ন ও গতিশীল প্রশাসনের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা অপরিহার্য এজন্য কমিটি টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহ-সিংঝানি এবং যমুনা নদী তীরবর্তী বিখ্যাত বন্দরনগরী সুবর্ণাখালী হতে ময়মনসিংহ, ভৈরব বাজার হতে কিশোরগঞ্জ হয়ে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও ধারানগিরি কয়লা খনি পর্যন্ত নতুন রেলপথ স্থাপনেরও সুপারিশ করেছিলেন।
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভাগের পর ময়মনসিংহ জেলাকে ৩ ভাগ করে নতুন ৩টি জেলা সৃষ্টির সুপারিশ করা হয় যার মধ্যে টাঙ্গাইল একটি। পাক- ভারত যুদ্ধের পর প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ অরাজনৈতিক ভাবে টাঙ্গাইল জেলা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে সোচ্চার হন এবং 'টাঙ্গাইল জেলা চাই' নামে আন্দোলন শুরু করেন। এ ব্যপারে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এঁর সক্রিয় সমর্থন ছিল। এইভাবে বিভিন্ন সময়ে দাবির প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার একশত বৎসর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯তম জেলা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে। ১৯৬৯ সালেই ডিসট্রিক্ট হেডকোয়ার্টারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। টাঙ্গাইল জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন জনাব এ.এন.কলিমুল্লাহ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস