বছরেরসেরা উদ্ভাবন–ডিসিলেক
!!! অপরূপা ডিসি লেক!!!
“জোটে যদি একটি পয়সা
খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি।
দুটি যদি জোটে অর্ধেকে তার
ফুল কিনে নিও হে অনুরাগী”
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত এর অপরিমেয় সৌন্দর্য পিপাসার আর্তি হাজার বছর ধরে মানুষের মনে প্রোথিত, তারই এক স্পষ্ট উচ্চারণ। কবির এ পিপাসা কেবল শিল্পী মাত্রই নয়, জনসাধারণের মনের প্রবল অভিব্যক্তিও। এ সৌন্দর্য তৃষ্ণা যেমন সারা পৃথিবীর মানুষের তেমনি বাংলাদেশের এক অনন্য জেলা টাঙ্গাইলের মানুষেরও। কিন্তু হায়! এইতো কিছুদিন আগেও টাঙ্গাইলের প্রাণকেন্দ্র ছিল কাঠখোট্টা বিরান এক শহর। সৌন্দর্য অবলোকন, চিত্ত-বিনোদন কিংবা একটু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলার মত জায়গাও ছিল অপ্রতুল। এতো গেল মার্চ ২০১৫ এর দৃশ্যপট।
এবার দৃশ্যপটে আগমনীবার্তা দিলেন সব্যসাচী একজন জেলা প্রশাসক। যে প্রশাসকের দরবার জেলার সকল সমস্যা সমাধানের কারবার। কিন্তু কিছুটা আর্শ্চয হলেন এবং অনুধাবন করলেন সুস্থ চিত্ত-বিনোদনের স্থানের অপ্রতুলতা। তাইতো ভূমিদস্যূদের কবল হতে দখলমুক্ত হলো পরিত্যক্ত বিশাল জলাভূমি এবং কর্মযজ্ঞ চললো টানা কয়েক মাস, তৈরী হলো নয়নভিরাম একস্থান“ডিসি লেক”। ৩৩.৪৫ একর আয়তনের এবং প্রায় দুই কোটি একানব্বই লক্ষ পঁচানব্বই হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ সুদৃশ্য লেকটির দুধারে রয়েছে লাল ইঢে মোড়ানো দুটি শান বাঁধানো ঘাট, লেকের মাঝে রয়েছে সৌন্দর্য্য অবলোকনের জন্য “লেকার্স ভিউ” নামে দ্বিতল মঞ্চ, মঞ্চে যাবার জন্য টাইলসে মোড়ানো সুসজ্জিত উঁচু সেতু এবং শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য“ডিসি লেক শিশুপার্ক”।
প্রকৃতি আর প্রযুক্তির এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সব্যসাচী জেলা প্রশাসক মো.মাহবুব হোসেন। কি নেই এতে ! এর জলে যেমন রয়েছে শত প্রজাতির মাছ তেমনি রয়েছে নানা রঙের পাখ-পাখালি। জলে রয়েছে শালুক, সাদা-লাল শাপলাসহ নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদের এক অপূর্ব সংগ্রহশালা। যে কোকিলের ডাক শুনিনি বহুদিন কিংবা যে পানকৌড়ি আজ বিলুপ্তির পথে তার সবই দেখা মেলে এ লেকে। আছে লাল-হলুদ রঙের নৌকা। লেক দর্শনে এলে একবার নৌকায় লেকটা ঘুরে বেড়াতে আপনার ইচ্ছে হবেই।
রাজধানী ঢাকা হতে মাত্র ৯৯ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে আসতে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বাস কিংবা ট্রেন। গাবতলী কিংবা মহাখালী থেকে চলাচলের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস এবং সাধারণ বাস দুটোই সহজলভ্য। বাসগুলোর মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা, সোনিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ভ্রমণটি আরও চমৎকার করার জন্য ট্রেন ভ্রমণ করে আসতে পারেন অতি অল্প খরচে।
এবার আসি এর মূল আকর্ষণে। লেকের মাঝে লাল ইটের ছাদে বড় গম্বুজাকৃতির দ্বিতল মঞ্চটি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আর আপনার ভ্রমণটি যদি হয় গোধূলী লগনে তবে এর লাল–নীল–বেগুনী কিংবা হলুদ বাতিগুলোর আলোকচ্ছটায় আপনার দৃষ্টি সম্মোহিত হতে বাধ্য।
জানা অজানা হাজারো বৃক্ষ শোভিত এ লেকেই রয়েছে অপরাজিতা, জবা, হাসনাহেনা কিংবা বাগান বিলাস ফুলের সমারোহ । লেকের ধারে রয়েছে হারিয়ে যওয়া দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ জারুল, তমাল, বাধাছড়াসহ শত প্রজাতির বৃক্ষের সমারোহ যা বৃক্ষপ্রেমীদের মোহিত করবে । কচি কৃষ্ণচূড়ার কিশলয় কিংবা মেহগনির ডালে হলুদ রঙের নাম না জানা পাখি আপনার দৃষ্টি কারবেই । কেননা এখানে পাখির বসবাসের জন্য কৃত্রিমভাবে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ের পাশাপাশি পাখির আহারের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে।
প্রযুক্তি আর সৌন্দর্যের এক অপূর্ব মিলনের ব্যবস্থা রয়েছে এ লেকের পানিতে নির্মিত “লেকার্স ভিউ” নামক মঞ্চে। এ মঞ্চে বসেই ফ্রি ওয়াই-ফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেমানুষ অবিরত। সম্পূর্ণ ফ্রি এ ইন্টারনেট সুবিধার সুযোগে সৌন্দয পিপাসু মানুষজন মুগ্ধ হতে ঘুরছে হয়তো আফ্রিকার গহীন জঙ্গলে অথবা নায়াগ্রা জলপ্রপাতে। মজার বিষয় হলো এখানকার বিপণী গুলোর মানুষজন আপনার সেবায় গরম খাবার কিংবা ঠান্ডা পানীয় পরিবেশন করছে অবিরত। তাদের হাসিমাখা মুখই বলে দেবে সবাইকে সাদর সম্ভাষণ।
শাপলা-শালুকের অপরূপা এ লেকের পাশেই রয়েছে শিশুদের চিত্ত বিকাশের এক অনন্যস্থান “ডিসি লেক শিশুপার্ক”। আপনার শিশুটি একবার হবে সিনবাদের জাহাজের নাবিক তো পরের বার ইঞ্জিনচালিত ট্রেনের চালক। পাশেই হয়তো ঘোড়ায় চড়ে পাড়ি দেবে তেপান্তরের মাঠ কিংবা নাগরদোলা দোল খেয়ে ঘুরবে ঠিকঠাক। হঠাৎ বাঘ মামার দেখা পেয়ে ভয় পাবেনা বরং পিঠে বসে খেলা করবে আর আপনি ফ্রেমবন্দী করবেন এই সুন্দর মুহূর্তের ছবি। সব অপরূপ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে আপনার আপেক্ষায় জেলা প্রশাসন।
সবাইকে সাদর সম্ভাষণ!
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস