Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
আতিয়া মসজিদ
স্থান

আতিয়া, দেলদুয়ার, টাংগাইল।

কিভাবে যাওয়া যায়

ঢাকা হতে সড়কপথে টাঙ্গাইলের দূরত্ব প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। টঙ্গী হয়ে  টাঙ্গাইল যেতে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিরালা, বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী ইত্যাদি বাস টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিয়মিতভাবে ছেড়ে যায়। এই সমস্ত বাসে টাঙ্গাইল যেতে ভাড়া লাগে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা।  


টাঙ্গাইল শহর থেকে মসজিদ টির দূরুত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার।  টাঙ্গাইলের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে পাথরাইল বটতলা আসতে হবে। অটোরিকসা জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া নিবে। বটতলা থেকে সিএনজি, রিকশা বা পায়ে হেটে আতিয়া মসজিদে যাওয়া যায়।

যোগাযোগ


প্রধান শিক্ষক 

শাশনশাহী উচ্চ বিদ্যালয় 



অথবা

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন আজাদ, আটিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, ০১৭১১১৬৩৩৪০,০১৭১০৮৮৭০৬৩

বিস্তারিত

টাঙ্গাইলের প্রত্নতত্ত্বব নিদর্শনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আতিয়া জামে মসজিদ। টাঙ্গাইল শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে দেলদুয়ার উপজেলায় এর অবস্থান। সারা বছর প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে। ‘আতিয়া’ আরবি শব্দ ‘আতা’ থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ হলো ‘দান’। পঞ্চদশ শতকে এ অঞ্চলে আদম শাহ্ বাবা কাশ্মিরী নামে বিখ্যাত এক সুফি ধর্মপ্রচারক এখানে আগমন করে বসবাস করতে থাকেন এবং ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন। এই সাধকের মাজার এই আতিয়াতেই

অবস্থিত। তিনি বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসায়েন শাহ কর্তৃক আতিয়ার জায়গিরদার নিযুক্ত (১৫৯৮ সালে) হয়েছিলেন বলে জানা যায়। ঐ সময় কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে তাঁর ধর্মীয় কার্য পরিচালনার ব্যয়ভার বহনের জন্য বিশাল একটি এলাকা বা মহাল ওয়াকফ্ হিসাবে পান। তাঁকে এ এলাকা দান করা হলে এ দান বা ‘আতা’ থেকে সম্ভবত এ পরগণার নাম ‘আতিয়া’ হয়েছে। শাহ্ বাবা কাশ্মিরী বৃদ্ধ বয়সে তাঁর পরামর্শে প্রিয় ভক্ত সাঈদ খান পন্নীকে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা নিয়োগ করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। সাঈদ খান পন্নী ১৬০৮ সালে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন। এটি দেলদুয়ার উপজেলা তথা টাঙ্গাইল জেলার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে নির্মিত এ মসজিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি মুহাম্মদ খাঁ।এ মসজিদটি নির্মাণের পর ১৮৩৭ সালে রওশন খাতুন চৌধুরাণী ও ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ খান গজনবী সংস্কার করেন।

মসজিদটির কিবলাকোটা ও বারান্দাসহ সার্বিক পরিমাণ ১৭.৭০ মিঃ ১২ মিটার। মসজিদের দেয়াল ২.২২ মিটার প্রশস্ত। বারান্দা ৩.৮২ ৭.৫ মিটার। সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্যরীতির সুষম সমন্বয় এ মসজিদে দেখা যায় চারকোণে ৪টি বিরাট অষ্টকোণাকৃতীর মিনার রয়েছে। মিনারগুলো ছাদের অনেক উপরে উঠে ছোট গম্বুজে শেষ হয়েছে। বাংলার স্থাপত্যসমূহ মূলত ইটের তৈরি, কারণ পাথর এখানে সহজলভ্য নয়। তাই বাংলার স্থাপত্য এবং তার অলংকরণ সবই বিকশিত হয়েছে ইটের মাধ্যমেই। আতিয়া মসজিদও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে এ মসজিদে সুলতানি স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যে যেমন বক্রাকার কার্নিশে, দ্বিকেন্দ্রিক সুচালো খিলান, গম্বুজ নির্মাণে বাংলা পান্দানতিভ ব্যবহার এবং উল্লেখযোগ্যভাবে পোড়ামাটির টেরাকোটা নক্শালংকারে। আতিয়া মসজিদের গম্বুজের নির্মাণশৈলীতে দেখা যায় কিবলা কক্ষের উপর বড় গম্বুজটি খিলানভিত্তিক নির্মাণ পদ্ধতিতে (স্কুইঞ্জ পদ্ধতি) এবং বারান্দার উপর ছোট তিনটি গম্বুজ ‘বাংলা পান্দান্তিভ’ পদ্ধতিতে নির্মিত। পরবর্তিতে সংস্কারের সময় গম্বুজগুলো পলেস্তরা দিয়ে সমান করে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু মসজিদ নির্মাণের সময় এমন ছিলো না। আদিতে গম্বুজগুলো পলকাটা বা ঢেউতোলা ছিল। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে সুড়ঙ্গপথ সম্বলিত ভূগর্ভস্থ কবর নিয়ে নানা মতান্তর রয়েছে।

বাংলার সুলতানি এবং মোগল উভয় স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে নির্মিত আতিয়া জামে মসজিদ যুগসন্ধি লগ্নের মসজিদ স্থাপত্য-নিদর্শনরূপে চিহ্নিত। বাংলাদেশে যে সকল মুসলিম স্থাপত্যিক ঐতিহ্য রয়েছে তার মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদ একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। টাঙ্গাইল অঞ্চলে প্রাপ্ত মূল শিলালিপিগুলোর মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদে প্রাপ্ত একটি আরবি একটি ফারসি শিলালিপি রয়েছে। এসবের মাধ্যমে মসজিদের নির্মাতা সময়কাল ও পূর্বের কিছু অসংতির সমাধান পাওয়া যায়। বিদায়ী সুলতানি আর নবাগত মোগল উভয় রীতির সংমিশ্রণে অপূর্ব এক মুসলিম স্থাপত্য, যা দৃষ্টিনন্দন ও এ অঞ্চলে বিরল।