Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলা সৃষ্টির ইতিহাস

টাঙ্গাইল জেলা সৃষ্টির ইতিহাস

ইতিহাস ও ঐতিহ্য বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় টাঙ্গাইল জেলা পাঁচ-সাড়ে পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে কামরূপ রাজ্যের বা প্রাগ জ্যোতিষপুর রাজ্যাংশ ‘ভাটির মুলুক’ এর অন্তর্গত ছিলো। দশম হতে একাদশ শতাব্দীর প্রারম্ব পর্যন্ত ১২০ কাল পাল রাজন্যবর্গ এই অঞ্চল শাসন করেছে। এর পর দ্বাদশ শতাব্দীতে সেন বংশের নৃপতি সেনের আমলে টাঙ্গাইল জেলা সেনদের অধিকারে আসে। ১৩০১ থেকে ১৩২২ খ্রিস্টাব্দে গৌড়ধিপতি সুলতান শাসসুদ্দিন ফিরোজ শাহ দেহলভী এই অঞ্চলে মুসলমান রাজত্বের সূচনা করেন।


বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা অতীত যমুনা নদীর বুকে নতুন জেগে ওঠা চর এলাকার সমষ্টি।এখানে ছোট্ট ছোট্ট জনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে যার অধিকাংশই ছিল পাশ্ববর্তী উত্তরবঙ্গের অর্থাৎ যমুনার পশ্চিম পাড়ের অধিবাসী। অতীত কাল থেকেই বহু ভাঙ্গাগড়া ও রাজনৈতিক দখল-বেদখল, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে যে এলাকা আজ টাঙ্গাইল জেলা বলে পরিচিত লাভ করেছে।


১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য জামালপুর মহকুমা সৃষ্টি হয়। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলাকে দু’টি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। ১। সদর বিভাগ, ২। জামালপুর বিভাগ। সদর বিভাগের অধীনে নাসিরাবাদ, গাবতলী, মধুপুর, নেত্রকোণা, ঘোষগাঁও, ফতেপুর, গফরগাঁও, মাদারগঞ্জ, নিকলি ও বাজিতপুর থানা সমূহ । আটিয়া পরগণার অঞ্চল সমূহ তখন ঢাকা জেলার অন্তর্ভৃক্ত ছিল। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ভূমি জরিপের সময়েও টাঙ্গাইলের উল্লেখ পাওয়া যায় না। রেনেলের মানচিত্রে আটিয়া পরগণার উল্লেখ ছিল। তখন বর্তমান টাঙ্গাইলের অধিকাংশ অঞ্চল আটিয়া পরগণার অধীনে ছিল। আঠার ও ঊনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত আটিয়া নামে পরিচিত অঞ্চলই বর্ধিত হয়ে বর্তমান টাঙ্গাইলের রূপলাভ করেছে। এ থেকে বুঝা যায় টাঙ্গাইলের সাবেকি নাম আটিয়া বললে খুব বেশী ভূল হবে না। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে সরকার পারদিঘুলিয়া মৌজায় টানআইল (পরে নাম রূপান্তর হয়ে টাঙ্গাইল হয়) থানার প্রত্তন করে। করটিয়ার মুসলিম জমিদারও বরাবর ইংরেজ বিদ্বেষী ছিল বিধায় আটিয়া পরগণাতেও নতুন থানা বা চৌকির স্থান নির্দিষ্ট হয়নি। যদিও প্রশাসনিক দিক থেকে সেটাই ছিল সর্বোত্তম।


টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করার জন্য বহু সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই প্রচেষ্টা বৃটিশ আমল থেকে পাকিস্তান আমলের শেষ পর্যায় ছিলো।অবিভক্ত বঙ্গদেশে ময়মনসিংহ জেলা ছিল সবচেয়ে বড় জেলা। ময়মনসিংহে থেকে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল শাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা ছিলো কঠিন কাজ। তাই স্বভাবত কারণেই টাঙ্গাইল মহকুমাকে জেলা উন্নীত করার বার বার দাবী উঠছে। একদা ময়মনসিংহ জেলাই টাঙ্গাইল অঞ্চলের গোপালপুর থানার সূবর্ণ খালীতে স্থানান্তর হতে চেয়েছিল। কারণ সূবর্ণখালী সেই সময়ে ময়মনসিংহ জেলার স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল। সুর্বণখালী যে তখন স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল তার বিবরণ কিছুটা পাওয়া যায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের প্রকাশিত ময়মনসিংহ গেজেটিয়ারে।অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য ময়মনসিংহের তৎকালীন সিভিল সার্জন ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলা সদর সুর্বণখালীতে স্থানান্তরের পরমর্শ রেখেছিলেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে Sir Andrew Fraser ময়মনসিংহ জেলা বিভক্ত করে পৃথক জেলা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আবার আলোচনায় নিয়ে আসেন। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গ ভঙ্গ হলেও বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে থাকে। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বঙ্গ ও আসাম সরকার এক প্রজ্ঞাপণের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলা সদরের দুই প্রান্তে পৃথক দু’টি জেলা সদর স্থাপন করে ময়মনসিংহকে দ’ুটি পৃথক জেলায় রূপান্তর করার বিষয়ে জনমত জরিপের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রস্তাবটি বিরোধিতার সম্মুখীন হলে টাঙ্গাইল জামালপুর মহকুমা নিয়ে পৃথক একটি জেলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ পূর্বক জনমত জরিপের ব্যবস্থা করেন। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা শহরে একটি বড় জনসভাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।


ধনবাড়ির অনারেবল নবাব স্যার নওয়ার আলী চৌধুরী সি.আই.ই সাহেব ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল মহকুমার কতিপয় জমিদার ও বিশিষ্ট ব্যাক্তিকে নিয়ে ধনবাড়িতে এক সভার আয়োজন করেছিলেন। সেই সভাতেই প্রথম সুবৃহৎ মোমেনশাহী জেলাকে বিভক্ত করার দাবী উত্থাপিত হয়েছিল। অনারেবল নবাব স্যার নওয়াব আলী চৌধুরী সাহেব ছিলেন ইংরেজ লাট সাহেবের কাউন্সিলর। তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়ে ছিলেন প্রভাবশালী জমিদার স্যার আবদুল হালীম গজনবী সাহেব। তিনি ছিলেন রেলওয়ের বোর্ডের সদস্য। তাদের মিলিত প্রচেষ্টায় সমগ্র টাঙ্গাইল মহকুমা ও জামালপুর মহকুমার কিয়দংশ নিয়ে একটা স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার দাবী পেশ করা হয়েছিল। দাবী করা হয়েছিল প্রস্তাবিত জেলার সদর স্থাপনের জন্য ধনবাড়িকে মনোনীত করা হোক।  প্রস্তাবনার পক্ষে বা বিপক্ষে তাদের তেমন অবন্থান ছিল না। তবে শিক্ষিত সুধিমহল বিশেষতঃ উকিল, মোক্তার, ব্যবসায়ী, জমিদার, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পেশাজীবি লোকজন জেলা বিভাজনের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিচার বিশ্লেষণ করেছেন। ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত স্বার্থ জরিত থাকার কারণে তারা ময়মনসিংহ জেলা সদরের বাইরে অন্য কোথায়ও জেলা সদর স্থাপনের বিরোধিতা করেছেন। 


বাংলার বিভিন্ন জেলা সমূহে বিদ্যমান অসুবিধা ও জটিল পরিস্থিতি যাচাই করার জন্য সরকার ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ অক্টোবর ৬ সদস্য বিশিষ্ট Bengal District Administration committee গঠন করেন। কমিটির মেয়াদকাল ছিল ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দ। মিঃ ই.ভি লিভিঞ্জ ছিলেন কমিটির সভাপতি এবং সদস্য সচিব ছিলেন মিঃ সি.ই.লো। কমিটির সম্মানিত সদস্য ছিলেন মিঃ এইচ. ভি. লোভেট, মিঃ এন.ডি বিটসন বেল, মিঃ কে.সি.দে এবং মিঃ ই.এন. ব্লান্ডি। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ নভেম্বর তারিখে কমিটি কাজ শুরু করেন। উক্ত কমিটি সরকারের বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ, বিগত কমিটি সমূহের রিপোর্ট পর্যালোচনার পাশা পাশি বিভিন্ন জেলায় সরোজমিনে পরিদর্শণ ও সুধিমহলের সঙ্গে মত বিনিময়ের মাধ্যমে প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে নিজস্ব সুপারিশ বা প্রস্তাবনা সরকারের নিকট পেশ করেন। তাদের সুপারিশ মালায় ময়মনসিংহ জেলা বিভিক্ত করে তিনটি পৃথক জেলা প্রতিষ্ঠা(ময়মনসিংহ, গোপালপুর ও কিশোরগঞ্জ) এবং বিদ্যমান পাঁচটি মহকুমার স্থলে নয়টি মহকুমার স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলার রূপরেখা ও কাঠামোঃ নালিতাবাড়ি থানা ব্যতীত সমগ্র জামালপুর এবং টাঙ্গাইল মহকুমা নিয়ে প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা গঠিত হবে। জেলা সদরের জন্য স্থান নির্বাচন প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল ও জামালপুর শহরের অধিবাসীদের মধ্যে উত্তেজনা ও উৎকণ্ঠা বিরাজমান ছিল। উভয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল লক্ষনীয়। জামালপুর ও টাঙ্গাইলের মধ্যে টাঙ্গাইল মহকুমা ছিল বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। তবে টাঙ্গাইল সদর শহর ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। টাঙ্গাইল অথবা জামালপুর শহরের যে কোন একটিকে প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে বেছে নিলে তা জেলার একপ্রান্তে অবস্থিত থাকবে।সেজন্য প্রশাসনিক যে অসুবিধা দেখা দিবে তা মোকাবেলার জন্য আবারও নতুন মহকুমা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবে। 


এসমস্ত অসুবিধা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বিবেচনা করে কমিটি টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত গোপালপুর থানাতে জেলা সদর স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রস্তাবিত জামালপুর-টাঙ্গাইল এবং সুর্বণখালী-ময়মনসিংহের রেলপথের সংযোগস্থলের নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকর একটি জায়গাতে জেলা সদর নির্মাণের স্থান বাছাই করা হয়। 


পরবর্তী কালে জেলা বিভাজন ও নতুন জেলা সৃষ্টির প্রস্তাব ও পরিকল্পনা সরকারী ও স্থানীয় ভাবে একাধিকবার আলোচনায় এসেছে। কিন্তু প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলার’কথা রহস্যজনক কারণে অন্ধকারেই থেকে গেছে। প্রস্তাবিত ‘গোপালপুর জেলা’বাস্তবায়িত হলে ময়মনসিংহ জেলার সমগ্র পশ্চিম অঞ্চলের জনগণ অধিক লাভবান হতো।টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার অবস্থান উত্তর-দক্ষিণ লম্বালম্বি। দু’প্রান্তে দু’টি মহকুমা সদর ও মাঝখানে জেলা সদর প্রতিষ্ঠিত হলে সমগ্র অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ব্যাপক প্রকাশ ঘটতো প্রায় শতবর্ষ পূর্বেই। মিঃ ই.ভি.লিভিঞ্জ কমিটির (১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দের) প্রস্তাবিত গোপালপুর জেলা এখন স্থানীয় আঞ্চলিক ইতিহাসে উপাত্ত মাত্র। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষে খেলাফত আন্দোলন শুরু হয়। মওলানা মুহম্মদ আলী ও মওলানা শওকত আলী এই আন্দোলনকে মহাত্নাগান্ধী সমর্থন করেন। ফলে আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের খেলাফত আন্দোলন বৃটিশ সাম্রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। খেলাফত আন্দোলনের জন্য টাঙ্গাইলকে জেলা করার পরিকল্পনা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এই সময় বাংলার দুই তৃতীয়াংশ লোক অনাহারে মারা যায়।মানুষ কচু ঘেচু নানারকম অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে অকালে প্রাণ ত্যাগ করতে থাকে।ইংরেজ সরকার দুর্ভিক্ষ রোধ করার জন্য চেষ্টা করেন। বাংলার বাইরে থেকে খাদ্যশস্য এনে জেলাওয়ারী খাদ্যশস্য বণ্টন করে দুর্ভিক্ষ রোধ করার চেষ্টা করা হয়। এই সময় অবিভক্ত বাংলার খাদ্য মন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব। টাঙ্গাইলের লোকজন টাঙ্গাইলের জন্য আরো খাদ্য শস্য বরাদ্দের জন্য খাদ্য মন্ত্রীর নিকট দাবি জানায়। শহীদ সাহেব সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই টাঙ্গাইলকে আলাদা একটি জেলায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেন।


১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন টাঙ্গাইল থেকে উপ-নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলেন। সে সময় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর অছিয়তে তরুণ অগ্নিবর্ষী নেতা শামছুল হকের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলবাসী ১৭ দফা দাবি সম্বলিত এক স্মারক লিপি পেশ করেছিলেন খাজা নাজিমুদ্দিনের কাছে। সেই ১৭ দফার মধ্যে প্রধান ছিল টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলায় পরিণত করার দাবী। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট র‌্যাডক্লিফ সীমানা কমিশন বাংলাকে দু’টি ভাগে বিভক্ত করে। ফলে পূর্ব পাকিস্তান বর্তমান বাংলাদেশের কিছু জেলার সীমানা পরিবর্তন ঘটে। তবে ময়মনসিংহ জেলার সীমানা আগের মত বহাল রাখা হয়। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে উপ-মহাদেশ বিভক্তের পর ময়মনসিংহ জেলাকে ৩ টি জেলায় ভাগ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত জেলাগুলোর নাম হলো- নাসিরাবাদ, কায়দাবাদ ও টাঙ্গাইল। এমনকি ময়মনসিংহ জেলার ৫টি মহকুমাকে ৫টি জেলায় বিভক্ত করার প্রস্তাবও করা হয়েছিল। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দের পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে জেলা স্থাপনের কাজ স্থগিত হওয়ার সুযোগে ১৯৬৬,১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ তৎকালীন গভর্ণর মোনায়েম খাঁর ভাই খোরশেদ খান সাহেব এক শ্রেণীর কায়েমী স্বার্থন্বেষীদের যোগসাহসে গভর্ণরের আর্শিবাদ পুষ্ট হয়ে জুট মিলের বিনিময়ে জেলার দাবী প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে প্রচন্ড রাজনৈতি অস্থিরতা ও সামনে সাধারণ নির্বাচন বিধায় কোনো রাজনৈতিক দলই তখন এদিকটায় তেমন উৎসাহ প্রদর্শন না করার কারণে অবশেষে প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁ কর্তৃক স্থাপ্তিত টাঙ্গাইল মাহ্ফিল (স্থাপিত ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক অরাজনৈতিক ভাবে জেলা প্রতিষ্ঠার দাবী নিয়ে সোচ্চার হতে হয় এবং ‘টাঙ্গাইল জেলা চাই’নামে আন্দোলন শুরু করা হয়। মাহ্ফিলে সভাপতি ড. আলীম আল রাজির নেতৃত্বে এই আন্দোলনে মাহফিলকে ড. এম.এন হুদা (সাবেক অর্থমন্ত্রী) তাঁর সরকারী সুবিধা ব্যবহার করে এন.ইসি’র অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সরবরাহ করে সর্বাত্নক সহযোগিতা দান করেন। টাঙ্গাইলের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ টাঙ্গাইল থেকে সবিশেষ সক্রিয়তা প্রকাশ করেন।


১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে উপমহাদেশ বিভাগের পর ময়মনসিংহ জেলাকে ৩ ভাগ করে নতুন ৩টি জেলার সৃষ্টি করা হয় যার একটি টাঙ্গাইল। পাক-ভারত যুদ্ধের পর প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ কর্তৃক অরাজনৈতিকভাবে জেলা প্রতিষ্ঠার দাবি নিয়ে সোচ্চার হন এবং টাঙ্গাইল জেলা চাই নামে আন্দোলন শুরু করেন। এ ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর সক্রিয় সমর্থন ছিল। 


১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব-পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন উপলক্ষে হক-ভাসানী- সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্ট গঠণ করেন। এই সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ সূচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। যুক্তফ্রন্টের কাছে টাঙ্গাইল বাসী টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা ঘোষণা করার দাবি জানায়। যুক্তফ্রন্ট তা নির্বাচনী ওয়াদা হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করে। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনী ওয়াদা হিসেবে টাঙ্গাইলকে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করে। এ ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর সক্রিয় সমর্থন ছিল। ১৯৩৮, ১৯৪৩,১৯৪৮,১৯৫৪ ও ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন মূখ্যমন্ত্রী ও বিভাগীয় মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যুক্তিক দাবী দাওয়া উত্থাপন ও সরকারী পর্যায়ে সমর্থিত হবার এক পর্যায়ে ১৯৬০,১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান অর্থনৈতিক কাউন্সিল মোমেনশাহীকে ভেঙ্গে টাঙ্গাইল, কাইদাবাদ ও নাসিরাবাদ জেলা করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার একশত বৎসর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের ১৯তম জেলা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।