Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

জেলা প্রশাসনের পটভূমি

টাঙ্গাইল জেলার নামকরণের ইতিহাস

টাঙ্গাইল নামটি কোথা থেকে উৎপত্তি হয়েছে তা সঠিক করে বলা যায় না। কারন এই নাম উৎপত্তির পেছনে একাধিক জনশ্রুতি কাহিনী ও উপাখ্যান প্রচলিত আছে। প্রাচীন পাল, মুগল ও সুলতানী আমলে টাঙ্গাইল নামের কোন স্থানের চিহ্নের চিহ্ন পাওয়া যায় না। বর্তমান টাঙ্গাইল জেলা পূর্বে মোমেনশাহী (বর্তমানে ময়মনসিংহ) জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৭৮৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হয়। তখন শ্রীহট্ট জেলার তরফ, ত্রিরা জেলার মেহের, সরাইল বরদাখাত নোয়াখালী জেলার ভেলুয়া, পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ, আসামের তুরা প্রভৃতি বহু দূরবর্তী স্থান এই মোমেনশাহী কালেকটরের শাসনাধীন ছিলো। সেই সময় টাঙ্গাইল জেলা মোমেনশাহীর অন্তর্ভূক্ত ছিলো। তবে তা আতিয়া, কাগমারী ও পরগনা নামেই পরিচিত ছিলো। ১৭৮৮ সালে ইংরেজ সরকার সর্বপ্রথম সমগ্র দেশের ভূমিজরিপ শুরু করেছিলেন। এতে কাগমারী ও আতিয়া পরগনার কথা আলাদা আলাদা করে উল্লেখ করা হয়েছিলো। তবে সেই খানেও টাঙ্গাইলের উল্লেখ ছিলো না।

অনুমান করা যায় যে, আঠারো ও উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত আতিয়া নামে পরিচিত অঞ্চলই বর্তমান “টাঙ্গাইল”। উল্লেখ্য ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত রেনেল তার মানচিত্রে এ সম্পূর্ন অঞ্চলকেই ‘আতিয়া’ বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ সালের পূর্বে টাঙ্গাইল নামে কোন স্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিত লাভ করে মহকুমা সদর দফতর আতিয়া থেকে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ সালে টাঙ্গাইল স্থানান্তরের সময় থেকে।

টাঙ্গাইল জেলার নামকরনের হ্মেত্রে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ ও জনশ্রুতির আলোকে যে সকল কৌতুহলদ্দিপক তথ্যসমূহ পাওয়া যায় তা নিন্মরুপ:

১। কাগমারী পরগনার জমিদার ইনায়াতুল্লাহ খাঁ চৌধুরী (১৭০৭-৪৭২৭) সাল লৌহজং নদীর টানের আইল দিয়া কাগমারীর আধামাইল দূরে খুশনুদপুরে (বর্তমানে সন্তোষ) তার সদর কাচারিতে যাতায়াত করতেন,এই টানের আইন বা টান আইল, দীর্ঘদিন ধরে উচ্চারিত হতে হতে টাঙ্গাইলে নাম ধারন করে।

২। সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে নবাব শায়েস্তা খাঁর বঙ্গ শাসনকালে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে পর্তুগীজ মগ জনদস্যুদের হামলা ও অত্যাচার চরম পর্যায়ে বেড়েছিল। শায়েস্তা খাঁ পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দাক্ষিণাত্যের মোগলদের নিয়ে নৌ-বাহিনী গঠণ করেন।পরে নৌ-বাহিনী ভেঙ্গে দেওয়া হলে এদের অনেকেই লৌহজং নদীর চর এলাকায় বসতি স্থাপন করে। এসব নতুন গড়ে ওঠা বসতিগুলোকে মোগলরা অভিহিত করেছিলেন দিহ্ টাঙ্গাল (দিহ্ শব্দের ফরাসী অর্থ হলো মহল্লা) যা কালক্রমে টাঙ্গাইল হয়েছে।

৩। এক মতবাদে জানা যায় যে, হযরত শাহা জামাল (রাঃ) জাহাজ দিয়ে এদেশে আসার পথে মাদ্রাজ থেকে একদল জেলে নিয়ে এসেছিলেন। তারা লৌহজং নদীর পূর্ব তীরে বসবাস শুরু করে। তাদের দলপতির নাম ছিল “টাংগা”। তার নামানুসারে এই স্থানের নাম হয় টাঙ্গাইল।

৪। আরেক সূত্র হতে জানা যায় যে, ১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী পারদীঘুলিয়া মৌজার অন্তর্গত আতিয়া নামক স্থানে টান-আইল থানার সদর-দপ্তর স্থাপন করা হয়। গত শতাব্দীর মধ্যবর্তী কালীন সময়ে টান-আইল মৌজা টাঙ্গাইল নামে রুপান্তরিত হয়।

৫। টাঙ্গাইলের কিছু অংশ অনেক নিচু ছিল। এই নিছু অংশের মানুষেরা মাটির উপর বাঁশ পুতে টংঘর নির্মান করত। ফরাফি শব্দ টং এর অর্থ হল উচু। অতীতে স্থানীয় অনার্যরা বাসস্থানকে ইল বলত। তাই কারো কারো মতে এই টংইল (উচু বাসস্থান) থেকেই টাঙ্গাইল শব্দের উৎপত্তি।

৬। অন্যদিকে বাংলাদেশ আদম শুমারী রিপোর্ট অনুযায়ী দাক্ষিণাত্যে মালাবার সমুদ্র উপকূল এলাকায় ‘মোপলা’ নামে এক জাতি বাস করত।মোপলাদের মধ্যে অত্যন্ত ক্ষমতাশীল ধর্মীয় নেতাদেরকে ‘তাংগাইল’ বলা হতো। এসমস্ত ধর্মীয় নেতাদের নামানুসারেই পরবর্তীকালে বর্তমান ‘টাঙ্গাইল’ নামকরণ হয়েছে।

৭। কারো করো মতে ‘টান’ এবং ‘ইল’ নামক দু’জন ইংরেজ সাহেব সন্তোষ জমিদারিতে এসেছিলেন থানার স্থান নির্বাচনের জন্য তাদের নামানুসারে নাম হয়েছে টাঙ্গাইল।

৮। টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানের নামে ‘আইল’ শব্দের আধিক্য আছে (যেমন- বাসাইল, ঘাটাইল, ডুবাইল, নিকরাইল, রামাইল ইত্যাদি)অনেকের ধারণা টাঙ্গাইলের অন্য স্থানের নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঘটনা প্রবাহে ‘টাঙ্গাইল’ নাম হয়েছে।

৯। কথিত আছে যে, জনৈক ইংরেজ সন্তোষ জমিদারিতে ব্রিটিশ আমলে রাজস্ব আদায় করতে এসেছিলেন। রাজস্ব নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে তাকে ডাকাতের কবলে পড়তে হয়। পরে ডাকাতগন তাকে হত্যা করে লৌহজঙ্গের পূর্ব পাড়ে টাঙ্গিয়ে (ঝুঝিয়ে) রেখে যায়। সে থেকেই টাঙ্গাইল নামের উৎপত্তি।

১০। জনশ্রুতিতে আছে, ব্রিটিশ আমলে নীল ব্যবসায় চরম উন্নতির সময়ে বর্তমান টাঙ্গাইল শহরে অসংখ্য টাঙ্গা গাড়ির ভীড় লেগে থাকত।তা থেকেই এ নামের উৎপত্তি।

১১। নামকরনে সর্ব প্রাচীন প্রবাদটি হলো “চমচম-টমটম-শাড়ি” এই তিনটিতে টাঙ্গাইলে বাড়ি।

১২। টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার একশত বৎসর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১ডিসেম্বর টাঙ্গাইল মহকুমা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯তম জেলা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করে।

     সর্বশেষ আপডেটঃ ২৬/০২/২০১৫